বিচিত্র: সুপ্রভাতের ১৬৩ বাস, কাগজে গলদ ১৪৫ টিতেই! 

গত মার্চের ১৯ তারিখে রাজধানীর বসুন্ধরা গেট ও যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের রাস্তায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবরার চৌধুরীকে চাপা দেওয়ার পর বন্ধ হওয়া সুপ্রভাত পরিবহনের ১৬৩টি বাসের মধ্যে ১৪৫টিরই সড়কে চলার মতো সনদ ছিল না। অর্থাৎ তাদের বৈধ অনুমোদনধারী বাস ছিল মাত্র ১৮টি!

আর ওই ১৪৫টি বাসের ফিটনেস, চলাচলের বৈধতাসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।

প্রসঙ্গত, গত ২১ মার্চ সুপ্রভাত ও জাবালে নূর পরিবহনের সব বাসের কাগজপত্র যাচাই করতে বিআরটিএ’র পরিচালক সিরাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিআরটিএ।

সুপ্রভাত পরিবহনের ১৬৩টি এবং জাবালে নূর পরিবহনের ২৯টি বাসের কাগজপত্র যাচাই করে চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় এই কমিটি।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী সুপ্রভাতের ২৯টি বাস চলাচল করছিল মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেস সনদ নিয়ে। ১৪টি বাসের ট্যাক্স টোকেন ও দুটি বাসের চলাচলের বৈধতা ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ।

এছাড়া সুপ্রভাতের ১০৪টি বাসের লাইসেন্সের শ্রেণি সঠিক পাওয়া যায়নি; আর ৩২টির লাইসেন্স বিআরটিএতে দাখিল-ই করা হয়নি।

তবে এই পরিবহনের ১৮টি বাসের ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, রুট পারমিট সনদ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স সঠিক পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। 

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই কালশী ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে কুর্মিটোলায় জেনারেল হাসপাতালের সামনে এয়ারপোর্ট সড়কে রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত জাবালে নূর পরিবহনের ২৯টি বাসের মধ্যে ৭টির কাগজপত্র বিআরটিএর কমিটির কাছে জমা দেয় মালিকপক্ষ। বাকি ২২টি বাসের কাগজপত্র বিআরটিএর সার্ভার থেকে যাচাই করে কমিটি।

এতে জাবালে নূর পরিবহনের ১০টি বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন এবং রুট পারমিট সনদ সঠিক বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ’ চলা অবস্থায় গত ১৯ মার্চ রাজধানীর নদ্দা এলাকায় সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের চাপায় ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার নিহত হওয়ার পর সেই বাসের রেজিস্ট্রেশন, রুট পারমিট সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়।

একইসঙ্গে বাসের চালক সিরাজুল ইসলামের (ইয়াসিন) ড্রাইভিং লাইসেন্সও বাতিল করে বিআরটিএ। এর পরের দিন সুপ্রভাত এবং জাবালে নূর পরিবহনের সব বাসের চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

লক্ষনীয় যে আবরারকে চাপা দেওয়া ঢাকা মেট্রো ব-১১-৪১৩৫ নম্বরের বাসটি ঢাকার মহাখালী থেকে টঙ্গী, কালিগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত চলাচলের অনুমোদন ছিল। কিন্তু সেই নির্দিষ্ট রুট বাদ দিয়ে বাসটি সদরঘাট থেকে টঙ্গী রুটে চালানো হচ্ছিল বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। 

সেদিন যা ঘটেছিল
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন সুপ্রভাত বাসের চালক সিরাজুলকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে জানান, গত ১৯ মার্চ পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকা থেকে সকাল পৌনে ছয়টার দিকে যাত্রা শুরু করে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসটি। পথিমধ্যে বাসটি রাজধানীর শাহজাদপুরের বাঁশতলা এলাকায় মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সিনথিয়া সুলতানাকে চাপা দিয়ে গুরুতর জখম করে। এ ঘটনার পর বাসের যাত্রীরা চালক সিরাজুলকে আটক করে ট্রাফিক পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এরপর বাসটির চালাতে বসেন কন্ডাক্টর ইয়াসিন।

গ্রেপ্তার ইয়াসিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, এসময় উপস্থিত জনতা বাসের ক্ষতি করতে পারে আশঙ্কায় বাস মালিক ননী গোপালের নির্দেশে ড্রাইভিং সিটে বসে কন্ডাক্টর ইয়াসিন। কোনো ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও সে চালকের আসনে বনে। এরপর মাত্র কিছুক্ষণ আগেই একটি দুর্ঘটনা ঘটানো বাসটি নিয়ে দ্রুত পালানোর সময় নর্দ্দা এলাকা পার হচ্ছিল সে। এমন সময় যমুনা ফিউচারের সামনে জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর বিইউপি শিক্ষার্থী আবরারকে চাপা দেয় সে।

আবরারকে হত্যার পর ইয়াসিন বাসটি রেখে আত্মগোপনে চলে যায়।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে